মাইতা তৈম পাহাড় (Maita Toiym Hill) বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত একটি অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান এবং পর্যটকদের জন্য অসাধারন একটি গন্তব্য। আলীকদম উপজেলা সদর থেকে পাহাড়টির দূরত্ব প্রায় ১0 কিলোমিটার। মাইতা তৈম পাহাড় সমুদ্রপৃষ্ট থেকে আনুমানিক ১৬০০ ফুট উচুতে অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এটি মইতা তৈম চৈত নামেই পরিচিত, যার বাংলা নাম মাইতা তৈম পাহাড়। পাহাড়টি আসলে ম্রো সম্প্রদায়ের লাং চিং মার্মা নামের একজন আদিবাসীর জুমের পাহাড়। যেখানে রয়েছে জুমঘর এবং একটি ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড।
মাইতা তৈম পাহাড়টি ঘন সবুজ জঙ্গলে আবৃত এবং এর চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ। পাহাড়ের চূড়া থেকে আশেপাশের গ্রাম, পাহাড়, মারায়ন তং এবং সবুজ ভ্যালির দেখা মিলে যা পাহাড়প্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান।
মাইতা তৈম পাহাড়ে ট্রেকিং
মাইতা তৈইম পাহাড় ট্রেকিং এবং অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। পাহাড়ের চূড়ায় উঠার পথে আপনি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। স্থানীয় গাইডরা পর্যটকদের সাথে এই অঞ্চলের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে তথ্য শেয়ার করেন। মাইতা তৈম ট্রেকিং এর সকল ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকেন ইয়াসিন ভাই। আলীকদম আবাসিকে ইয়াসিন হোটেলে গেলেই ওনাকে পেয়ে যাবেন। উনি তাবু থেকে ট্রেকিং গাইড সকল কিছুর সরবারহ করে থাকেন। তার বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ রয়েছে। তাবু, বালিশ কম্বল, খাওয়া-দাওয়া (দুপুর, রাত, সকালের নাস্তা), গাইড সকল কিছু মিলিয়ে ৯০০ টাকার প্যাকেজে আপনি সবকিছু পেয়ে যাবেন। আর যদি মাইতা তৈম এর জুমঘরে থাকতে চান তাহলে আপনাকে অতিরিক্ত ২০০০ টাকা গুনতে হবে। সেক্ষেত্রে বুকিং এর কাগজ সাথে নিয়ে যাবেন প্রিন্ট করে এবং যে জুমঘরের বুকিং দিয়েছেন সেই জুমঘরের ছবিও সাথে রাখবেন ঝামেলা এড়াতে।
ভ্রমণের সেরা সময়
মাইতা তৈম পাহাড় ভ্রমণের সর্বোত্তম সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস। এই সময়ে আবহাওয়া ট্রেকিংয়ের জন্য সবথেকে আরামদায়ক থাকে, আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং আর্দ্রতা কম থাকে। বর্ষাকাল (জুন থেকে অক্টোবর) প্রকৃতি সবুজে ভরে থাকে, তবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ট্রেকিং কষ্টকর হতে পারে। আরামদায়ক অভিজ্ঞতার জন্য, শীতকাল আদর্শ।
যেসব সাবধানতা অবলম্বন করবেন
যাত্রাপথে প্রচুর পরিমাণে পানি, গ্লুকোজ, স্যালাইন, শুকনো খাবার, ফ্রাস্ট এইড বক্স, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নেবেন। রান্না করতে চাইলে প্রয়োজনীয় উপকরণ, ম্যাচ ও জ্বালানিও নিয়ে নেবেন। আগুন জ্বালাতে শুকনো কাঠের অভাব হবে না। রাতে ক্যাম্পিং করতে চাইলে সঙ্গে তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ, হালকা চাদর নিয়ে নেবেন। কেননা গরমের মৌসুমেও রাতে খানিকটা ঠাণ্ডা পড়ে পাহাড়ে। পাহাড়ে ওঠার আগে সমতলেই স্থানীয় প্রশাসনের কাউকে পেলে নিজেদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানিয়ে রাখবেন। তাঁদের কোনো পরামর্শ থাকলে সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
পাহাড়ে ওঠা কিংবা ক্যাম্পিং করতে চাইলে পথিমধ্যে সংশ্লিষ্ট পাড়ার হেডম্যানদের জানিয়ে রাখুন। সম্ভব হলে তাঁদের কাছ থেকে ফোন নম্বর চেয়ে নেবেন। পরে সাহায্যের প্রয়োজন হলে তাঁদের জানাতে পারেন। পাড়ার আশপাশে চলতি পথে পাহাড়িদের কোনো ফল বা ফুলের গাছ থেকে অনুমতি ছাড়া কিছু পাড়তে বা ছিঁড়বেন না। দরকার হলে কিনে নেবেন। সস্তাতেই তা পাওয়া যাবে। পাহাড়িদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে তাদের অনুমতি নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। পাহাড়ে রান্নাবান্না করলে অবশ্যই তা সাবধানে করবেন। যাতে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে না পড়ে। চিপস, বিস্কুট, আচার কিংবা অন্যান্য ড্রাই ফুডের প্যাকেট অবশ্যই সংগ্রহ করে নিচে নিয়ে আসবেন।
মাইতা তৈম ট্রেকিং করতে চাইলে অবশ্যই সাথে পরিচয়পত্র কিংবা ভোটার আইডি এর কপি সাথে রাখবেন, আর্মি ক্যাম্পে দেখাতে / জমা দিতে হবে। মাইতা তৈম এর চূড়ায় খাবার ও পানির কোন ব্যবস্থা নেই, কাজেই শুকনো খাবার ও পানি সমতল থেকেই নিয়ে যেতে হবে।
মাইতা তৈম পাহাড় প্রকৃতি প্রেমী এবং অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নির্জন পরিবেশ এটিকে বান্দরবানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থানে পরিণত করেছে।