► ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতে আতিউর বারকাতের বিরুদ্ধে মামলা
► এস কে সুর পরিবারের ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ফ্রিজ
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, আতিউর রহমান ছাড়াও সাবেক এবং বর্তমান ৫৩ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার এবং আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৫৩ কর্মকর্তার মধ্যে বর্তমান এবং সাবেক ২৮ জন কর্মকর্তার সেফ ডিপোজিট লকার তল্লাশি করেছে দুদক। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০১ মিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত আতিউর রহমানের তদন্ত করছে দুদক। আবদুর রউফ তালুকদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ব্যাংক খাত থেকে অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে দুদক। কমিশন বাংলাদেশ ব্যাংকে অনিয়মের অভিযোগ এবং রউফ তালুকদারের বিরুদ্ধে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ সম্পর্কিত তথ্য গোপন করার অভিযোগে আরও একটি অনুসন্ধান শুরু করেছে। রংপুরের আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালীন সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোরশেদ আলমের ৫৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক এবং ৭০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করছে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগ ব্যবসা, অর্থ পাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নুরুন নাহার এবং ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধেও আরেকটি অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সীতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগেও দুদক তদন্ত করছে। তদন্তের অংশ হিসেবে, দুদকের একটি দল ঢাকায় এস কে সুরের বাসা থেকে ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্র এবং বিমা সংক্রান্ত কাগজপত্র ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা নগদ উদ্ধার করেছে। গত ২৬ জানুয়ারি এস কে সুরের বাংলাদেশ ব্যাংকের সেফ ডিপোজিট লকার থেকে ১ কেজি সোনা, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ ডলার, ৫৫ হাজার ইউরো এবং ৭০ লাখ টাকার স্থায়ী আমানতের রসিদও জব্দ করেছে দুদক। বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির সহকারী পরিচালক আমিরুজ্জামান মিয়া ঢাকায় বিলাসবহুল বাড়ি এবং তিনটি প্লটসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধানের মুখোমুখি হচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক উপদেষ্টা আবু ফারাহ মো. নাসের, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন, উপমহাব্যবস্থাপক ইমাম সাঈদ, যুগ্ম পরিচালক মো. সারোয়ার হোসেন, সুনির্বাণ বড়ুয়া, জুবায়ের হোসেন, অনীক তালুকদার, রুবেল চৌধুরী এবং লেলিন আজাদ পলাশ, অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবদুর রউফ, মো. ওয়াদুদ এবং মো. মঞ্জুর হোসেন খান, সাবেক উপপরিচালক মোফাজ্জল হোসেন, সাবেক সহকারী পরিচালক (ক্যাশ) আনোয়ার হোসেন এবং সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) তরুণ কান্তি ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধানও করছে দুদক। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে এস কে সুরের সেফ ডিপোজিট লকার থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র জব্দের পর দুদক সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আরেকটি অভিযান চালায়, তবে তারা দেখতে পায় আরও ২৫ জন কর্মকর্তার নামে কোনো সেফ ডিপোজিট লকার নিবন্ধিত নেই। তবে দুদক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২৮ জন কর্মকর্তার নামে সেফ ডিপোজিট লকার খুঁজে পেয়েছে। ২৮ জন কর্মকর্তা হলেন- নির্বাহী পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, আহমেদ জামাল, আশীষ কুমার দাশগুপ্ত, মোহাম্মদ মাসুম কামাল ভূঁইয়া, শুভঙ্কর সাহা, পরিচালক মো. রাজীব আলী, লুৎফে আরা বেগম, প্রদীপ রঞ্জন দেবনাথ, ওয়াহিদা নাসরিন, মনি শংকর কুন্ডু, আরিয়াত হোসেন খান এবং মিজানুর রহমান আকন্দ, মহাব্যবস্থাপক মো. সাজ্জাত হোসেন খান, মো. কাউসার মতিন এবং মো. আক্কাস উদ্দিন, উপমহাব্যবস্থাপক মাহমুদ সালাউদ্দিন নাসের, মো. এনামুল করিম খান, ইসতেকমাল হোসেন, মুস্তফা আজাদ কামাল, দিলীপ কুমার দত্ত, এ কে এম কামরুজ্জামান, গোলাম মুস্তফা এবং শাহ মো. মাইনুদ্দিন, অতিরিক্ত পরিচালক নাসিমা খাতুন এবং আলাউদ্দিন আল আজাদ, বিএফআইইউর অতিরিক্ত পরিচালক কাজী মনির উদ্দিন এবং উপব্যবস্থাপক কল্যাণী সাহা। ২ ফেব্রুয়ারি দুদক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে এই লকারগুলোতে অননুমোদিত প্রবেশ রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। তারপর থেকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল সদর দপ্তর লকার প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে দুদক ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সীতাংশু কুমার সুর চৌধুরী এবং তার পরিবারের সদস্যদের এবং বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করেছে কমিশন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কয়েকজন প্রাক্তন এবং কর্মরত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে।
আতিউর ও বারাকাতের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা : ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান এবং জনতা ব্যাংক পিএলসির সাবেক চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে এননটেক্স গ্রুপকে ঋণের নামে দেওয়া ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন মামলাটি করেন। পরে বেলা পৌনে ৩টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
স্ত্রী-কন্যাসহ এস কে সুরের সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দ : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সীতাংশু কুমার সুর (এস কে সুর), তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও মেয়ে নন্দিতা সুর চৌধুরীর নামে থাকা দুটি ফ্ল্যাট, একটি জমি জব্দ ও ৩৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪০ টাকা জমা আছে। গতকাল ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন এসব স্থাবর সম্পদ জব্দ ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধের আবেদন করেন।